আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জানেন ‘ইয়ারল্যাং জাঙবো’ কী? ভারতের ব্রহ্মপুত্র নদ। যা চিনে ওই নামে পরিচিত। বলে রাখা ভালো, ইয়ারল্যাং জাঙবো তিব্বতে বয়ে যায়। ওই বিপুল জলরাশিতে আধুনিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বানিয়ে নদীর গতিপথ উত্তরে ঘোরাতে চায় চিন। গুরুতর অভিযোগ, ভারতকে নাকি এভাবেই চাপে রাখতে চায় চিন। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসে চিন কি নতুন করে চিন্তার কারণ হতে পারে?
পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞদের ধারণা, অবশ্যই, নরেন্দ্র মোদীর চিন্তার কারণ হবে চিন। ব্রহ্মপুত্র নদের উপর চিনের বাড়তি লালসা নয়াদিল্লির কর্তাদের ঘুম কেড়ে নিতে পারে। আসুন জানি, ব্রহ্মপুত্র নদ’কে নিয়ে চিনের এত উৎসাহের আসল কারণ কী। বলে রাখা ভালো, কয়েকদিন আগেই ভারতের বিদেশমন্ত্রক সংসদে জানিয়েছিল, ব্রহ্মপুত্রের উপর চিনের প্রকল্প ভারতকে চিন্তায় রেখেছে৷
১. জেনে রাখা দরকার ব্রহ্মপুত্রের জল ব্যবহারে চিনের সঙ্গে ভারতের কোনও চুক্তি নেই। যেকারণে ভারত বিষয়টিতে লাল সঙ্কেত দেখছে।
২. চিন নাকি মনে করে, ব্রহ্মপুত্রের উপর বাঁধ দিয়ে নিজের দেশের জন্য জল প্রকল্প তৈরি করলেই ভারতের অরুণাচল প্রদেশ কব্জা করা যাবে।
৩. ভারত মনে করে বিতর্কিত তিব্বত মালভূমিতে চিনের প্রকল্প তৈরি হলে দেশের উত্তর-পূর্বে জলের যোগান কমবে। চাপ পড়বে অর্থনীতিতে।
৪. ভারত-চিনের জলযুদ্ধ কি রক্তক্ষয়ী হাতিয়ার যুদ্ধে পরিণত হতে পারে? উত্তেজনার আশঙ্কা রয়েছে। ২০১৭ সালে একটি ভিন্ন ইস্যুকে নিয়ে ভুটানের ডোকলামে দুই দেশের যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। মোদী সরকার চিনকে ছেড়ে কথা বলেনি৷ পরে অবশ্য সেনা সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় চিন৷
৫. শোনা যায়, চিন নাকি ভারতকে নদের বহমানতা সম্পর্কে কোনও তথ্যই দেয় না৷
৬. নদের বহমানতা নিয়ে চিনের এই লুকোচুরির প্রধান কারণ অন্য৷ চিন ভালো করেই জানে ইয়ারল্যাং জাঙবো বা ব্রহ্মপুত্রের বহমানতার খবর ভারত পেয়ে গেলে উত্তর-পূর্বে বন্যার হাত থেকে বেঁচে যাবে৷ বেঁচে যাবে বাংলাদেশও৷ ভারতকে এই সুবিধা দিতে চায়না চিন৷ বিশ্বের দরবারে চিন দেখাতে চায় যে ভারত বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ৷
৭. এও শোনা যায়, চিন নাকি বাংলাদেশকে নদের বহমানতা সম্পর্কে তথ্য দিয়ে দলে টানতে চায়৷
৮. চিনকে সরকারিস্তরে তাদের জলবিদ্যুত প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছে ভারত৷ সালটা ২০১৩৷
৯. চিন নদের বহমানতা সম্পর্কে কোনও তথ্য ভারতে না দিতে চাইলেও, ২০০৮ এবং ২০১০ সালে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জলস্তর এবং বৃষ্টিপাতের ব্যাপারে তথ্য দিতে রাজি হয়েছিল৷ কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি৷
১০. চিনের লাল-হো জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে জিয়াবকু নদীর উপর৷ সিকিমের কাছে ওই জায়গাটির নাম জিগেজ৷ ৭৪০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে৷ এই জায়গা থেকেই চিন নেপালের দিকে রেলপথ নিয়ে যেতে চায়৷
১১. ২০১০ সালে জাংমুতে ইয়ারল্যাং জাঙবো নদীর উপর প্রথম বাঁধ দিয়েছিল চিন৷ দাগু, জিয়াচা এবং জেইজুতে আরও তিনটি ছোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি হচ্ছে৷
১২. চিনের কথা উঠলেই পাকিস্তানের নাম জড়াবেই৷ অনেক রিপোর্ট বলছে, ইয়ারল্যাং জাঙবো-এর উপর চিন বাঁধ দিয়ে জলপ্রকল্প শুরু করেছিল তখনই যখন ভারত সিন্ধু নদ চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের থেকে প্রাপ্য জল ছিনিয়ে দিতে উদ্যত হয়েছিল৷ ভারতকে পালটা চাপে ফেলতে চিনের কাছে পাকিস্তান অনুরোধ করেছে৷ সেই কারণেই চিন এই পদক্ষেপ নিয়েছে – মনে করে অনেক রিপোর্ট৷ বিশেষজ্ঞ থেকে গবেষক – অনেকেরই মতে চিনের সঙ্গে ভারতে জলযুদ্ধের তীক্ষ্ণতা বাড়বে৷ নয়াদিল্লি-বেজিং, চিন্তায় থাকবে দুই শিবিরই৷
মতিহার বার্তা ডট কম-০৬ জুলাই ২০১৯
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.